মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়াঃ
স্কাউট আন্দোলনের প্রথম স্তর কাব স্কাউটিং। কাব স্কাউটিং করে এবং যাদের বয়স ৬ থেকে ১১ বছর তাদেরকে কাব স্কাউট বলা হয়। স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল ১৯১৪ সালে স্কাউটিং এর একটি শাখা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। তিনি ১৯১৬ সালে কাব শাখার জন্য দিক নির্দেশনা স্বরূপ “দি উলফ কাব হ্যান্ড বুক” নামে একটি বই লেখেন এবং কাবিং শুরু করার ঘোষনা দেন। তারই প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ররত ৬-১১ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা কাব স্কাউট শাখায় বিশ্বব্যাপী স্কাউট আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকে।কাব স্কাউট বন্ধুদের সাথে দলে কাজ করতে উৎসাহ দেয়, যাতে সতর্কতার সাথে নেতৃত্ব তৈরি করে তারা আদর্শ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। এছাড়া কাব স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া হয় যেখানে কমবয়সী ছেলেমেয়েরা তাদের ইতিবাচক ভাল গুনাবলীকে দৃঢ় করার সুযোগ পায়। তারা সুযোগ পায় ভাল ফলাফল করার, মানসম্মত শিক্ষা অর্জন ও সুন্দর জীবন গড়ার। বাংলাদেশে ‘কাব স্কাউট প্রোগ্রাম’ এর পর্যায় ক্রমিক বিভিন্ন ব্যাজ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে একজন স্কাউট কাবদের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’ এর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। একজন কাব স্কাউট সদস্য, তারা, চাঁদ ও চাঁদ-তারা ব্যাজ অর্জনের পর পর্যায়ক্রমে ইউনিট, উপজেলা, জেলা, আ লিক ও জাতীয় পর্যায়ের মূল্যায়নে সফল হলে একজন কাব স্কাউট ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’ পেয়ে থাকে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে থাকেন। যা একজন কাব স্কাউট হিসেবে সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। এই অ্যাওয়ার্ড একজন শিক্ষার্থী ফুলের মত সুন্দর জীবন গড়তে এবং সুন্দর আগামীর দিকে অগ্রসর হতে সীমাহীন অনুপ্রেরণা যোগায়। আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাংলা, গণিত, ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, বিজ্ঞান, ধর্ম, শারীরিক শিক্ষা, সংগীত এবং চারু ও কারুকলা বিষয়গুলোর ওপর পাঠদান করা হয়। সুতরাং এই বিষয়গুলো কাব স্কাউটরাও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে অধ্যয়ন করে এবং শিক্ষা গহণের সুযোগ পায়। একজন কাব স্কাউটকে প্রতিটি দক্ষতা ব্যাজ অর্জনের পাশাপাশি পারদর্শিতা ব্যাজ অর্জন করতে হয়। এজন্য নির্দিষ্ট সিলেবাস অনুসারে পড়াশুনা করতে হয়। এই সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলোর প্রায় ৫০% প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য বিষয় হতে নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় এই বিষয়গুলো শ্রেণিকক্ষে তত্ত্বীয় শিক্ষার পাশাপাশি কাব স্কাউটিংয়ে হাতে-কলমে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে বিষয়গলো অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় খুব সহজেই আয়ত্ব করতে পারে। তাছাড়া এই বিষয়গুলো শ্রেনিকক্ষে অধ্যয়ন করলে কাবিং এর জন্য শুধুমাত্র রিভিশন বা পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছে বা কাবিং এর জন্য অধ্যয়ন করলে শ্রেনিকক্ষের জন্য রিভিশন বা পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছে। অবশিষ্ট ৫০% সিলেবাস সম্পন্ন করতে নিজ হাতে প্রত্যাহিক জীবনের প্রয়োজনীয় কাজ করতে হয়। তাদেরকে ধর্ম, দেশপ্রেম, নৈতিকতা ও শিষ্টাচার, মানবসেবা, জীবের প্রতিদয়া, মিতব্যয়িতা, স য় ইত্যাদি বিষয়ে অধিকতর জ্ঞান অর্জন করতে হয়। তারা খেলাধুলা, চ্যালেজিং ও ইনোভেটিভ বিষয়েও পারদর্শী হয়। কাবদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য সর্বদা ভাল কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় বলে তারা কোন ধররেণ অন্যায় কাজে লিপ্ত হয় না। সর্বোপরি শৈশব কাল থেকেই নিজেদের কাজ নিজেরা করে আত্মনির্ভরশীল হয়। একই সিলেবাস তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক শিক্ষার সুযোগ পেয়ে তারা বিষয় জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়। সপ্তাহে একদিন প্যাক মিটিং করে বলে দলীয় চেতনা ও নেতৃত্বের গুনাবলী অর্জন করে। র্যালি, সমাবেশ, আলোচনাসহ বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়। স্কাউটস্ ওন নামক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে ধর্মীয় মহাপুরুষগণের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা শুনে আলোকিত জীবন গড়ে। স্কাউটিং কার্যক্রম ও অনুষ্ঠানে একজন ৬ বছর বয়সী শিশু থেকে শিক্ষক, বিভিন্ন ধরণের পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, সরকারি সকল পদ মর্যাদার কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, মাননীয় প্রধানন্ত্রী, মহামান্য রাষ্ট্রপতি অংশগ্রহণ করে থাকেন। ফলে কাব স্কাউটগণ উপযুক্ত মানুষ হওয়ার অনুপ্রেরণা পায়। অর্থাৎ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা ও সুন্দর জীবন গঠনে কাব স্কাউটিং এর ভুমিকা অপরিসীম।
লেখক: ইন্সট্রাক্টর উপজেলা রিসোর্স সেন্টার
স্কাউট লিডার, এ্যাডভান্স কোর্স সম্পন্ন।
কলাপাড়া, পটুয়াখালী।
Leave a Reply